কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক সুভাষচন্দ্র রায়ের ছোট মেয়ে স্মৃতি রানী অভাবী সংসার ও কৃষক হওয়ায় বড় মেয়ের সাথী রানীর অল্প বয়সে বাল্য বিয়ে দিলে প্রায় সময়ের সংসারে অশান্তি লেগে থাকত।
এমনকি কম বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে স্মৃতি রানীর দিদির প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মগ্রহণ করেই মৃত্যুবরণ করেন। বাল্যবিয়ের এমন কুফল দেখে মনে অনেক কষ্ট পান স্মৃতি রানী মনে মনে ভাবতে থাকেন কিভাবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা যায়,গ্রামের লোকজনের কথায় বাবা-মা এবার স্মৃতি রানীর বিয়ে ঠিক করলে বাবা মাকে বুঝিয়ে নিজের বিয়ে নিজেই প্রতিরোধ করেন,অভাবী সংসারে অনেক কষ্ট করে চালিয়ে যান নিজের লেখাপড়া, বাবা যখন লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছিল না ঠিক তখনি চাইল্ড নট ব্রাইট প্রকল্পের প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতায় পরিচালিত মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি এর সহযোগিতায় ২০২৩ সালের মার্চ মাসে এক মাসের দর্জি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন স্মৃতি রানী।
প্রশিক্ষণ শেষে সেখান ৭ হাজার টাকা পেলে তা দিয়ে কিনেন একটি সেলাই মেশিন। এরপর শুরু হয় স্মৃতির লেখাপড়া ও জীবন যুদ্ধের সংগ্রাম, আশেপাশে গ্রামের মানুষের কাপড় কেটে সেলাই করে যা আয় হয় তা দিয়েই ভালোভাবে চলতে থাকে স্মৃতির লেখাপড়া, এছাড়া কাপড় সেলাই করে লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি বাবা-মাকেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে থাকেন স্মৃতি রানী, লেখাপড়া চালিয়ে ক্ষান্ত হননি স্মৃতি রানী, ২০২৪ সালের আবারো মহিদেব থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এলাকায় গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে থাকেন স্মৃতি রানী,বর্তমানে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ইয়ুথ চ্যাম্পিয়ন স্মৃতি রানী তার গ্রুপে ৬০ জন যুব সংগঠনের সদস্যরা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছেন।স্মৃতি এখন বালারহাট আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, লেখাপড়া শেষ করে হতে চান অ্যাডভোকেট। স্মৃতি রানী গ্রুপের সিওসি সমাপ্তি রানী ও সুমাইয়া আক্তার লিপা ,বাল্যবিবাহ সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না স্মৃতি দিদি আমাদেরকে গ্রুপের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, আমরা একসাথে এখন আমাদের গ্রামের ও ইউনিয়নে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছি।
স্মৃতির বাবা-মা জানান, আমরা অনেক গরিব মানুষ তেমন লেখাপড়া জানি না কম বয়সে বড় মেয়েটির বিয়ে দিয়েছি তার সংসারে অনেক অশান্তি চলছে, গ্রামের মানুষের কথায় ছোট মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম মেয়ে কম বয়সে বিয়ে করতে রাজি হয়নি, এখন দর্জি কাজ করে নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই চালিয়ে যাচ্ছে পাশাপাশি আমাদেরকেও সাহায্য করছে। স্মৃতি রানী জানান,বাল্যবিবাহের কারণে একটি মেয়ের কি ধরনের সমস্যা হয় তা আমার বড় বোনের সাংসারিক জীবন দেখে বুঝেছি, আমার বাবা মা গরিব মানুষ বড় বোনের মত আমাকেও বাল্যবিবাহ দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি সেটি প্রতিরোধ করে এখন নিজেই উপার্জন করে লেখাপড়া চালানোর পাশাপাশি আমাদের গ্রাম ও ইউনিয়নের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছি।
আমাকে এই কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি। এখন আমাদের ইউনিয়নে বাল্যবিবাহের হার অনেক কম। নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, বাল্যবিবাহ বাংলাদেশের একটি জটিল সামাজিক সমস্যা যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, এটি শুধুমাত্র একটি কুসংস্কার প্রথা নয় বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্বাস্থ্যগত সমস্যা, শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং দারিদ্র্যচক্র আবদ্ধ হওয়ার মতো ভয়াবহ পরিণতি। স্মৃতি রানী বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে যে কাজ করছেন তার জন্য আমি তাকে সাধুবাদ জানাই, এখন আমার ইউনিয়নে আগের চেয়ে অনেক অংশে বাল্যবিবাহ কমে গেছে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সোহেলী পারভীন জানান, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতির স্মৃতি রানী সহ যুব সংগঠনের সদস্যরা যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই, সেই সঙ্গে সবাইকে সচেতন হয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করার আহবান জানাই।