গেল কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই সর্বত্র শীতের আমেজ দেখা দিয়েছে। অগ্রহায়ণের প্রথম থেকে এ আমেজ আরও বেড়ে গেছে। মানুষজনের গায়ে চড়েছে শীতের কাপড়। এবার আগাম শীত পড়ায় সন্ধ্যার পর থেকে কমছে তাপমাত্রা। একইসাথে ফাঁকা এলাকায় দেখা মিলছে কুয়াশা। ভোরে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়ছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামায় বিলম্বিত হচ্ছে। ভোরবেলা সবুজ ঘাসের পাতার ওপর শিশির বিন্দুর সাথে সূর্যোদয়ের মিষ্টি রোদ জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগাম বার্তা। এতে সকলের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে অত্রাঞ্চলে চলে এসেছে শীত। ফলে শীত মোকাবেলায় মানুষজন যে যার মতো করে প্রস্তুতি নিয়েছেন। আগাম শীতের কারণে শীতবস্ত্র ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসির ঝিলিক দেখা গেছে। শীতকে কেন্দ্র করে গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার কোমড় বেঁধে ব্যবসায় নেমেছেন তারা। বিদেশ থেকে আমদানিসহ ব্যবসায়ীরা চট্রগ্রাম থেকে শত শত পুরাতন শীতবস্ত্রের গাইট (বেল) সৈয়দপুরে আনছেন। পরে আশেপাশের জেলা উপজেলার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন ওইসব শীতবস্ত্র। এছাড়া স্থানীয় মার্কেটসহ ফুটপাতে গড়ে ওঠা বাজারে উঠেছে নানা ধরণের শীতের কাপড়। ব্যবসায়ীদের একাধিক সুত্র বলছে, গত বছরের চেয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুরে শীত মৌসুমে শীতবস্ত্রের এবার ভালোই বেচাকেনা শুরু হয়েছে। পাইকারি থেকে শুরু করে খুচরা পর্যায়ে এ বছর বিক্রি ২৫ কোটি টাকা বেচাকেনা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা। সুত্র জানায়,সৈয়দপুরে বিদেশ থেকে আনা শীতবস্ত্রের আমদানিকারক রয়েছেন দুইজন এবং পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছেন ১০/১২ জন। মূলত তাদের মাধ্যমে চট্রগ্রাম থেকে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানে শীতবস্ত্র এনে গোডাউন ও দোকানে জমা করা হয়। পরে অন্যান্য দোকান ও গোডাউনে ঘুরে দরদাম করে এসব শীতবস্ত্র কিনে নেন আশেপাশের প্রতিটি জেলা উপজেলার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয় বলে সুত্রটি জানায়। পাইকারি পুরোনো শীতবস্ত্র ব্যবসায়ী মামুন ক্লথ স্টোরের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সালাউদ্দিন স্টোরের মালিক মো. সালাউদ্দিন বলেন, এখানে জ্যাকেট,সোয়েটার,কোর্ট,কার্ডিগান, টুপি,হুডি মাফলারসহ সবধরণের কাপড়ের গাইট (বেল) খোলা হয়। প্রকারভেদে এসব বেলের পাইকারি মূল্য পড়ে ৫ থেকে ২০/২২ হাজার টাকা। এরমধ্যে জ্যাকেটে ও সোয়েটারের বেলের দাম কোয়ালিটি অনুযায়ী ৮ থেকে থেকে ২০/২২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারা জানান, শীতে বেচাকেনা বেশি হলেও বাকিও দিতে হয়। তাঁদের মতো অনেকেই লাভ লোকসানের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে লাভ ক্ষতি যাই হোক, শীতের সময় মানুষজনের কর্মসংস্থান হয়, এজন্য আলহামদুলিল্লাহ। বলেন তারা। ব্যবসায়ীদের অপর সুত্র জানায়, এসময় দেশের অন্যান্য জেলা থেকে আনা এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি শীতের কম্বলও বেচাকেনা চলছে ধুমছে। সৈয়দপুরের পাইকারি বাজারে এসব কম্বল কেজি ও পিস হিসেবে বিক্রি হয়ে আসছে। সুত্রটি জানায়, রংপুরের পর উত্তরাঞ্চলের মধ্যে বেশ বড় পাইকারি মোকাম গড়ে উঠেছে সৈয়দপুরে। শীত মৌসুমে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীসহ কয়েকটি জেলায় শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় সৈয়দপুরে গরম কাপড়ের চাহিদা বেশি। রংপুর বিভাগের মধ্যে সৈয়দপুর উপজেলা মধ্যবর্তী স্থান ও বাস ও ট্রেনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এখানকার শীতবস্ত্রের ব্যবসাও জমজমাট। সৈয়দপুর বস্ত্র মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জানান, শীতকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে এলসির মাধ্যমে আমদানি এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের বেল এনেছেন। শীত নামার উপর নির্ভর করবে তাদের ব্যবসার লাভ ক্ষতি। গতবার তেমন শীত না থাকায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তারা। তবে এবার লাভের আশায় মজুদ করা হয়েছে পর্যাপ্ত মালামাল।ব্যবসায়ীদের সুত্র জানায় গত শীতে তেমন একটা বেচাকেনা না হলেও এবার ২৫/৩০ কোটি টাকারও বেশি কেনাবেচা হতে পারে। এমনটাই আশা তাদের। শীতবস্ত্র আমদানিকারক সালাউদ্দিন ক্লথ স্টোরের মালিক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, গাইডের কাপড় তাইওয়ান, জাপান ও কোরিয়া থেকে বেশি আসে। আমদানির পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে এসব কিনে স্বল্প লাভে বিক্রি করি। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বাকি ও নগদে কিনে নেন। গেল দুই বছর লাভের মুখ দেখাতো দুরের কথা আসল টাকা উঠানো যায়নি। তবে এবার লাভের আশা করছি। এদিকে শীত উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারও শহরের রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু করে ২ নং রেলঘুমটি পর্যন্ত রেললাইনের উভয় পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রকারের পুরাতন শীতের কাপড়ের দোকান। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে এ মার্কেটের বেচাকেনা। এখানকার খরিদদার হলেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের লোকজন। মাঝে মাঝে সংসারে স্বচ্ছলতা আছে এমন ক্রেতাদেরও দেখা যায়। খুচরা মৌসুমি কাপড় ব্যবসায়ী খুরশিদ হোসেন বলেন, শীতের সময়ে শীতবস্ত্র বিক্রি করে বাড়তি আয় হয়। অন্য সময় দিনমজুরের কাজ করলেও গোটা শীতে মহাজনের কাছ থেকে শীতবস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করি। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলে যায়। বাড়িভাড়া ও অন্যান্য খরচও করা যায় নিশ্চিতে। খুরশিদ হোসেনের মতো কয়েক শত মৌসুমি ব্যবসায়ী সৈয়দপুরে রেললাইনসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে শীতবস্ত্র বিক্রি করেন। শীতের জ্যাকেট ও সোয়েটার ছাড়াও অন্যান্য গরম কাপড় কিনতে ঠাকুরগাঁও থেকে আসেন আনোয়ার ও সামশুল নামে কাপড় ব্যবসায়ী। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে তাদের সাথে কথা হয় শহরের শহীদ ডা. শামসুল হক সড়কের একটি পাইকারি শীতবস্ত্র বিক্রয়ের দোকানের সামনে। তারা বলেন, এবার শীতবস্ত্রের দাম কিছুটা বাড়লেও তা সহনীয়। জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার ও টুপি কিনবো। চাকুরিজীবী সাজু বলেন, এখানে কম দামে পোশাক পাওয়া যায় বলে, প্রতি বছর পরিবারের সকলের জন্য গরম কাপড় কিনতে আসি। তবে এবার একটু দাম কিছুটা বেশি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৈয়দপুরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, রেললাইনের ধারে সারাবছরই শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জিসহ নানান পোশাক বিক্রি হয়। তবে শীতের সময় শীতবস্ত্র বেচাকেনা হয় অনেক বেশি। কিন্তু এ ব্যবসার মাঝেও ঝুঁকি ও উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করে তাদের মাঝে। তাদের মতে হকার্স মার্কেট করে দিলে ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে।
০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনামঃ
সৈয়দপুর পুরাতন শীতবস্ত্র বাজার
২৫ কোটি টাকা বেচাকেনার বিক্রির আশা ব্যবসায়ীদের
-
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর
- প্রকাশিত ০৭:১১:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
- ৩ বার পড়া হয়েছে

filter: 0; fileterIntensity: 0.0; filterMask: 0; brp_mask:0; brp_del_th:null; brp_del_sen:null; delta:null; module: photo;hw-remosaic: false;touch: (-1.0, -1.0);sceneMode: 2;cct_value: 0;AI_Scene: (-1, -1);aec_lux: 0.0;aec_lux_index: 0;albedo: ;confidence: ;motionLevel: -1;weatherinfo: null;temperature: 39;
জনপ্রিয় সংবাদ