- Advertisement -
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমেরর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ৯ উপজেলার ৪৬ ইউনিয়নের নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে পাকা সড়ক, উঁচু বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় দফার বন্যার কবলে পড়া কর্মহীন এসব মানুষের খাদ্য সংকটের পাশাপাশি দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। বন্যা কবলিত এলাকার কাঁচা পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের খেয়ার আলগার চরের মোজাম্মেল হক জানান, গত কয়েকদিন আগের বন্যায় কষ্ট করে বাড়িতে ছিলাম। আবার ৫/৬ দিন থেকে পানি বাড়তে বাড়তে আগের পানির চেয়ে আরো বেশি পানি হয়েছে। যদি আরো পানি বাড়তে থাকে তাহলে আর বাড়িতে থাকার উপায় নাই। গরু, বাছুর, ছাগল, ভেড়া, হাস, মুরগী নিয়ে কোথায় যাবো বুঝে উঠতে পারছি।
একই ইউনিয়নের কালির আলগা চরের আব্দুল মালেক বলেন, বাড়িতে এক বুক পানি। বাড়ির লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে এসে বাড়ি পাহাড়া দিচ্ছি। একদিকে হাত কাজ নেই, ঘরে খাবারও নেই। অন্যদিকে বন্যার পানি। সব পানির নীচে, রান্না করার উপায় নাই। এ অবস্থায় একবেলা শুকনো খাবার খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে দিন পার করছি।
উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিক মন্ডল জানান, আমার ইউনিয়নের পুরোটাই বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। যাদের বাড়িতে থাকার উপায় নেই তারা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে। এই বন্যা কবলিত মানুষেরা কেউ চুলা জ্বালাতে পারছেন না। তাদের জন্য শুকনো খাবার জরুরী হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আইয়ুব আলী জানান, আমার ইউনিয়নের প্রায় ৩২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে থাকায় পরো ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে সড়কে অবস্থান নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকারী কোন ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, সোমবার বিকেল ৩টার রেকর্ড অনুযায়ী কুড়িগ্রামে সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৬২ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে অন্যান্য নদীর পানিও। আগামী ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯ উপজেলায় বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১৬০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৪ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা ও গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা দ্রুত বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।