আগামী তিন মাস পর অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি থেকে সারাদেশে বাড়ি বাড়ি ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব শফিউল আজিম।
তিনি বলেছেন, ২০০৯ সালের ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী জানুয়ারিতে বাড়ি বাড়ি তালিকা হালনাগাদ শুরু হবে। সে সময়টা এখনো আসেনি। আমাদের রুটিনে আছে ২ জানুয়ারি থেকে এটি শুরু করার। এখন প্রতিদিনের হালানাগাদ করছি।
কমিশনের অনুমোদন ছাড়া সেটা ঘোষণা করবেন কি না, হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, এটা কমিশনের কাজ। সুতরাং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে। এখন তো আইনে আমার লিগ্যাল অথরিটি নেই। এতদিন যেটা হয়ে গেছে, সেটা তো আসেনি।
প্রয়োজনী সংস্কারের পর রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছে ভোটার তালিকা তৈরি হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে, সম্প্রতি নিউইয়র্ক সফরকালে এমনটি জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ দেন। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যে সময় শেষ হবে আগামী ৪ নভেম্বর। এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই পদত্যাগ করেছেন কাজী হাবিউল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ‘আলোচনার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না’ উল্লেখ করে পত্রিকায় লেখা এক কলামে সাংবিধানিক সংকট উত্তরণে বেসামরিক ফরমান জারির আহ্বান জানান।
তিনি সেখানে বলেন, সংবিধানে উল্লেখিত মেয়াদের মধ্যে ভোটের আয়োজন না করলে নির্বাচন কমিশনের মৃত্যুদণ্ড হওয়ার বিধান রয়েছে। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনিসহ পুরো কমিশন পদত্যাগ করেন।
বর্তমানে কমিশনহীন ইসিতে আইনে নির্ধারিত রুটিন কাজগুলোই করছেন ইসি সচিব শফিউল আজিম। আইন অনযায়ী, কমিশনের অনুমোদনক্রমে প্রতিবছর দুই জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাযর্ক্রম পরিচালনার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের পর যাচাই-বাছাই, দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ২ মার্চ প্রকাশের বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে জানুয়ারিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালানাগাদ করতে হলে তার আগেই নিয়োগ দিতে হবে নতুন কমিশন।
এনআইডি সেবা নিয়ে ইসি সচিব বলেন, আমি যেটা বিশ্বাস করি সমস্যাটাকে সামনে নিয়ে আসা। ভোগান্তি আছে, দুর্নীতি আছে, দুর্নীতিবাজ আছে স্বীকার করতে হবে। আবার সব মানুষ দুর্নীতিবাজ নয় এটিও স্বীকার করতে হবে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্কিংডেতে কাজ করছি। আমরা চেষ্টা করছি যেন গুণগত পরিবর্তন আনতে পারি।
শফিউল আজিম আরও বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদে উপজাত হচ্ছে এনআইডি। আজকে পর্যন্ত ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫৬০ জন ভোটার হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে আমরা ভোটার করছি। মৃত মানুষ তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতার দিক থেকে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। পাঁচ বছর, দশ বছর পার্থক্য কী করে হয়।
‘এজন্য যখন আপনি ফরম পূরণ করবেন আপনার হাতে লেখা ফরম আপ করে দেবো। এতে ইসমাইল হোসেনের জায়গায় ইসরাইল হোসেন হলে ভুলটা কার ছিল- ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের নাকি আপনার সেটা বোঝা যাবে। আমাদের লোক ভুল করলে ক্ষমতা চাইতে হবে। সেবাগ্রহীতা ভুল করলে আমরা সমাধান করে দেবো। কাজেই ফরম পূরণের সময় ১৯৭৮ নাকি ১৯৮৭ লিখেছেন এগুলোর বিষয়ে আমরা সিস্টেম ডেভেলপ করবো। তাহলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে। দালাল শ্রেণির দৌরাত্ম্য কমবে। আমরা মানুষকে সহজে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
ইসি সচিব আরও বলেন, সেবাগ্রহীতাকেও রেসপনসিবল করার জন্য বলছি। একবার জন্মতারিখ একটা বললেন আবার বললেন ১০ বছর কমাতে হবে। এখানে একটা দিক হলো অফিসকে বাড়তি কষ্ট দিচ্ছেন, আরেকটা হলো হয়তো কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এটা করছেন। তৃতীয় হলো দুর্নীতির একটা সিস্টেম তৈরি করে দিচ্ছেন। যখন ১০ বছর কমাতে বলবেন, তার মানে দুর্নীতির একটা বিরাট জায়গা তৈরি হচ্ছে।