- Advertisement -
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলা মাস কার্তিক ও অগ্রহায়নের সঙ্গে গা ঘেঁষা-ঘেঁষি। শিশিরের সাথে নিরবে আবির্ভাব ষড়ঋতুর এ দেশে, নবান্নের আনন্দের সুবার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ফসলের মাঠে সোনালী ধানের হাসির আভার ব্যাপকতা ছড়ায় কার্তিকের শুরুথেকেই পরিপূর্ণতা জমে অগ্রাহয়ণে। মোলায়েম কুয়াশার ছাতিম ও শিউলির মৃদুমন্দ সৌরভ হিমেল স্নিগ্ধছোঁয়া আর সকাল-সন্ধার হেমন্তের মিহি কুয়াশার তালে নতুন ধানে কৃষকের ঘরে ঘরে ধুম পড়ে নবান্নের অনাবিল আনন্দ।
‘সবুজ ঘাসে শিশির হাসে, মুক্তার সাজে, মৌমাছি গায়ছে গান, গুনগুন সুর বাজে। সোনালী ধান নবান্ন ঘ্রাণ ভরে যায় মন, কৃষকের মন-প্রাণ, ধন-ধান্যে পরিপূরণ। খালে-বিলে অতিথী পাখি বসছে ঝাঁকে ঝাঁকে, সন্ধা হলে ডানা মেলে কিচির-মিচির ডাকে। ঝিলের জলে ছেলে-মেয়ে শাপলা শালুক খুঁটে, পালা গানের উৎসবে মাতি হাসি সবার ঠোঁটে।’ কবি আবু জাফর এভাবেই নবান্নের রূপ লাবন্য বর্ণনা করেছেন।
উত্তরের জেলা রংপুরের কাউনিয়ায় চিরায়ত নিয়মে হেমন্তের মধ্য ভাগে নতুন ধান ঘরে তোলার সাথে কৃষক কূলে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। বাংলার এ কৃষক সমাজ সদূর প্রাচীন কাল থেকে নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে। কালের বিবর্তনে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও তারা নবান্নের আনন্দ পালন করতে ভুলেনি আজো। একই ছন্দে বঙ্গভুমির এ উপজেলাতেও গ্রামীন কৃষক-কৃষাণীর ঘরে নবান্নের আনন্দ পরিপূর্ন ভাবে উদযাপনের জন্য মেয়ে জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আমন্ত্রন করে এনে নতুন চালের পোলাও, পিঠা ও পায়েসসহ রকমারী নিত্য নতুন খাবার তৈরী করে ধুম-ধামে ভুঁড়ি ভোজের আয়োজন চলছে।
উপজেলার খোপাতি গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, গ্রাম্য বধুরা জামাইকে সাথে নিয়ে বাপের বাড়িতে নবান্নের আনন্দ পালন করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। নবান্ন উৎসবে গ্রামের কৃষকেরা মিলেমিশে গরু, মহিষ ও খাঁসি জবাই করে। এছাড়াও হাট-বাজার থেকে বড় মাছ কিনে আনে। এই নিয়মের ধারাবাহিকতায় এলাকার কৃষকদের ঘরে ঘরে চলছে এখন ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসবের আমেজ। নতুন ধান সিদ্ধ করে ভাঙ্গিয়ে এ চালে নবান্ন ও জামাই আদরের ব্যবস্থা করেছেন তারা।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আমন মৌসুমের বিনা-৭, ব্রি-৪৯, ব্রি-৩৪ ধান চাষাবাদ হয়েছে। বর্তমানে বেশীর ভাগ কৃষকেরা এ ধান কেটে ঘরেও তুলেছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আমন ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। আমন ধানের মধ্যে বিনা-৭ জাতের ধান বিঘা প্রতি ১৩ থেকে ১৫ মন হারে ফলন হয়েছে, তা বাজারে বিক্রয় হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ব্রি-৪৯ ও ব্রি-৩৪ জাতের ধান প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ মন হারে ফলন হয়েছে, যা বাজারে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রয় হচ্ছে।
কথা হয় প্রান্তিক কৃষক আরাজী হরিশ্বর গ্রামের মোহাম্মদ আলী ও আঃ সালাম, বাহাগিলী গ্রামের শামসুল ও রনজিৎ, হরিচরণলস্কর গ্রামের সাইফুল, রাশেদুল, নির্মল চন্দ্রসহ উপজেলা সদরের আজিজুল ইসলাম প্রমুখ এর সাথে।
তারা জানান, বিনা ধান-৭ চাষ করে প্রতি বিঘায় ১৩ থেকে ১৬ মন করে ধান পেয়েছি। কৃষি অফিসের পরামর্শে ধান চাষ করেছিলাম ফলে খরচ কম হওয়ায় কিছুটা লাভের আশা করছি এবং ধান একটু আগাম কাটতে পারায় রবিশস্যও চাষ করতে আমাদের সুবিধা হয়েছে। তবে তাদের অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন ধানের বাজার দর অনুযায়ী আমাদের ধান চাষ করে পোষাচ্ছে না। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ধানের লস রবি শস্য চাষ করে পুঁষিয়ে নেয়া যাবে বলেও জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানিয়েছেন, এ বছর চলতি আমন মৌসুমে কাউনিয়া উপজেলার পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নে আমন ধানের জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১১ হাজার ৪’শ ৭২ হেক্টর। আর এ জমি থেকে ৩২ হাজার ১’শ ৫০ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। চলতি বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় আমন ক্ষেতে রোগ বালাই কম দেখা দিয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।